বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে জন্ম নিয়েছেন হাজারো কথা সাহিত্যিক, ঐপন্যাসিক এবং লেখক। তাদের লেখনির মাধ্যমে বাংলাদেশ পেয়েছে আলাদা একটা পরিচিতি। এমন হাজারো ঐপন্যাসিক ও লেখকদের মধ্যে যার নামটি স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে তিনি হলেন হুমায়ুন আজাদ।
একাধারে তিনি কবি, ঐপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী,সমালোচক রাজনীতির ভাষ্যকার,গবেষক এবং অধ্যাপক ছিলেন। বাংলাদেশে প্রথা বিরোধী লেখকদের মধ্যে তার নামটি হয়ত প্রথমেই থাকবে।
কিন্তু দেশটা যেখানে বাংলাদেশ সেখানে প্রথা বিরোধী কথা বলাই মানেই অনেক কথা আর অনেক বিতর্ক । হুমায়ুন আজাদও প্রথা বিরোধী লেখিনির জন্য অনেক বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু তাই বলে কি লেখকের কলম কখনো থেমে থাকে? হুমায়ুন আজাদ কোন ভয় দঢ় না করে চালিয়ে গেছেন তার সাহসী লেখনি।

হুমায়ুন আজাদের সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা
নাম | হুমায়ুন আজাদ |
ছদ্মনাম | হুমায়ুন কবীর |
জন্ম | ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ কামারগাঁ, বিক্রমপুর (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ), ব্রিটিশ ভারত |
পিতা | আবদুর রাশেদ |
মাতা | জোবেদা খাতুন |
দাম্পত্য জীবন সঙ্গী | লতিফা কোহিনূর |
পেশা | কবি, সমালোচক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, অধ্যাপক |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী সমগ্র | অলৌকিক ইস্টিমার সব কিছু ভেঙে পড়ে নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু একটি খুনের স্বপ্ন |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারত ব্রিটিশ ভারত (আগস্ট ১৯৪৭) বাংলাদেশ (১৯৭১ – ২০০৪) |
মৃত্যু | ১১ আগস্ট ২০০৪ মিউনিখ, জার্মানি রাঢ়িখাল, বাংলাদেশ (সমাধিস্থল) |
হুমায়ুন আজাদের বাল্য জীবন
হুমায়ুন আজাদের জন্ম ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে। তার জন্মস্থান কামারগাঁ, শ্রীনগর,বিক্রমপু্র(বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ),ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)। হুমায়ুন আজাদের বাবার নাম আব্দুর রাশেদ ও মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। প্রথম জীবনে আজাদের বাবা পেশায় একজন শিক্ষক হলেও পরবর্তীতে তিনি নিজেকে ব্যাবসার সাথে সম্পৃক্ত করেন। হুমায়ুন আজাদের মা ছিলেন একজন গৃহিণী।
হুমায়ুন আজাদের শিক্ষা জীবন
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একজন তুখোড় মেধাবী ছাত্র তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল রাঢ়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আর সালটা ছিল ঠিক ভাষা আন্দোলনের অর্থাৎ ১৯৫২ সাল। সেখানে তিনি ইনফ্যান্ট থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি রাঢ়িখালের স্যার জে সি বোস ইন্সটিউশনে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯৬২ সালে হুমায়ুন আজাদ রাঢ়িখালের স্যার জে সি বোস ইন্সটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরিক্ষায় অংশ নেন এবং উক্তীর্ণ হন। তার মনবাসনা ছিল তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন ।
তাই নিজের সেই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি পাড়ি জমান ঢাকা শহরে। এরপর ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়ন শুরু করেন এবং ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।
নিজের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নে অটুট থেকে হুমায়ুন আজাদ শুরু করেন কঠোর অনুশীলন। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পরালেখা শুরু করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ।
হুমায়ুন আজাদের বৈবাহিক জীবন
প্রেম সবার জীবনেই আসে কথাটা হয়ত সবাই মেনে নিবেন । প্রেমহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার।হুমায়ুন আজাদের জীবনেও প্রেম এসেছিল .১৯৬৮ সালে লতিফা কোহিনূর নামের এক তরুণীর সাথে হুমায়ুন আজাদের পরিচয় হয় এবং প্রথম দেখাতেই তিনি কোহিনূরের প্রেম পরে যান।
অনেকদিন প্রেম করার পর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিন্তু হুমায়ুন আজাদ দেশের বাইরে থাকায় তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৫ সালে টেলিফোনে কথা বলার মাধ্যমে।
হুমায়ুন আজাদের কর্মজীবন
হুমায়ুন আজাদের কর্মজীবন ছিল সফলতায় পরিপূর্ণ। মাত্র ২২ বছর বয়সে হুমায়ুন আজাদ তার বর্ণময় কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের পথচলা শুরু। এরপর হুমায়ুন আজাদ আর পিছে ফিরে তাকান নি। ১৯৭০ সালে হুমায়ুন আজাদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি একই সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ অর্থাৎ এই তিন বছর অধ্যাপনায় নিযুক্ত থাকার পর পিএিচডি ডিগ্রি লাভের উদ্দেশ্য হুমায়ুন আজাদ পাড়ি জমান স্কটল্যান্ডে। ১৯৭৬ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএিচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যিক জীবন
ইতিহাস সাক্ষী পৃথিবীতে যত কবি,সাহিত্যি, লেখন জন্মেছিলেন তাদের প্রায় সবাই বাল্যকাল থেকেই নিজেদের প্রতিভার প্রমান দিয়েই তাদের সাহিত্যিক জীবন শুরু করেছিলেন। হুমায়ুন আজাদও এর ব্যাতিক্রম ছিলেন না।হুমায়ুন আজাদের সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থাতেই।
ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় “ঘড়ি বলে টিক টিক” নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন হুমায়ুন আজাদ।তার এই প্রবন্ধটি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশ পায় এর পর হুমায়ুন আজাদের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
হুমায়ুন আজাদ ৭টি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস,২২টি সমালোচনয়ামূলক গ্রন্থ,৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ,৮টি কিশরসাহিত্যসহ মোট ষাটের বেশি গ্রন্থ লিখেছেন।
হুমায়ুন আজাদের জনপ্রিয় উক্তি
“মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে”
“পুঁজিবাদের আল্লার নাম টাকা, মসজিদের নাম ব্যাংক”
“হিন্দুরা মুর্তিপূজারী; মুসলমানেরা ভাবমুর্তিপূজারী। মুর্তিপূজা নির্বুদ্ধিতা; আর ভাবমুর্তিপূজা ভয়াবহ”
“এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশ দূষন| অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও”
হুমায়ুন আজাদের মৃত্যু
হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন ।উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়।সুস্থ হয়ে হুমায়ুন আজাদ জার্মানিতে পাড়ি জমান। ২০০৪ সালের ১১ আগষ্ট হুমায়ুন আজাদ পরলোক গমন করেন।