জগদীশ চন্দ্র বসু মানেই বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান মানেই জগদীশ চন্দ্র বসু কি ভুল বললাম? না মোটেই ভুল বলিনি কারণ বিজ্ঞানে জগদীশ চন্দ্র বসু যে অবদান রেখে গেছেন তা সারা বিশ্ব সারাজীবন মনে রাখবে। বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার এক পর্যায়ে তিনি এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা দেখে হতবাক হয়ে যায় সারা বিশ্ব।
তিনি এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার যেটার মাধ্যমে তার ছাড়াই বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব হয়।আর তার এই আবিষ্কারের হাত ধরেই পরবর্তীতে আবিষ্কার হয় বর্তমানে সময়ের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কার মোবাইল ফোন,রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট।বিজ্ঞান যার ধ্যান জ্ঞান তিনি কি আর একটা আবিষ্কারে বসে থাকতে পারেন!
উদ্ভিদ নিয়ে জগদীশ চন্দ্র বসুর চিন্তা ভাবনা যেন আরো গভীর আর এই গভীর চিন্তা ভাবনার এক পর্যায়ে তিনি আবিষ্কার করেন উদ্ভিদ দেহে প্রাণের অস্তিত্ব। তিনি আরো প্রমাণ করেন আমাদের মত উদ্ভিদরাও ঠাণ্ডা এবং গরম অনুভব করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ হুমায়ুন আজাদের জীবন বৃত্তান্ত

জগদীশ চন্দ্র বসুর সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা
নাম | জগদীশ চন্দ্র বসু |
ছোটবেলার ডাকনাম | কালু |
পরিচিতির কারণ | মিলিমিটার তরঙ্গ, বেতার ক্রেসকোগ্রাফ, উদ্ভিদবিজ্ঞান |
জন্ম | ৩০শে নভেম্বর ১৮৫৮, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ জেলা (ব্রিটিশ ভারত) |
পিতা | ভগবান চন্দ্র বসু |
মাতা | বামা সুন্দরী বোস |
দাম্পত্য জীবন সঙ্গী | অবলা বসু |
পেশা | পদার্থবিজ্ঞানী, জৈবপদার্থবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং সাহিত্যিক |
উল্লেখযোগ্যপুরস্কার | সিআইই (১৯০৩) সিএসএই (১৯১১) নাইট ব্যাচেলর (১৯১৭) |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মৃত্যু | ২৩শে নভেম্বর ১৯৩৭, গিরিডি, ব্রিটিশ ভারত (বয়স ৭৮) |
জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রাথমিক জীবন
জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ময়মনসিংহে (পূর্বে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত ছিল) বর্তমানে বাংলাদেশ। ময়মনসিংহে জন্ম নিলেও জগদীশ চন্দ্র বসুর পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে।
জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবার নাম ছিল ভগবান চন্দ্র বসু যিনি পেশায় একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পেশায় নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে অনেক দিন শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসুর মায়ের নাম ছিলো বামা সুন্দরী দেবী।
জগদীশ চন্দ্র বসুর শিক্ষা জীবন
জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবা অনেক উচ্চ শিক্ষিত একজন মানুষ ছিলেন কিন্তু তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবা ইংরেজীর চেয়ে বাংলা ভাষাকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন যদিও তিনি ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবার ইচ্ছাতেই জগদীশ চন্দ্র বসুকে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি করানো হয়।জগদীশ চন্দ্র বসুকে এই বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর একটাই উদ্দেশ্য ছিল তিনি যেন দেশের ভাষা,দেশের সংস্কৃতি ও দেশপ্রেমের শিক্ষা লাভ করতে পারেন ।নিজের বিজ্ঞানমনা মনকে বিজ্ঞানের আরো কাছে নিয়ে যেতে তিনি গ্রামের স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে পাড়ি জমান কলকাতায়।সেখানে তিনি হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন।
এখানে পড়ালেখার সময় জগদীশ চন্দ্র বসু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হন এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উপর দিন দিন তার দক্ষতা বাড়তে থাকে। এরপর তিনি ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।ইউজিন ল্যাফন্ট নামক এক ব্যক্তি জগদীশ চন্দ্র বসুকে অনেক সাহস তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।বিজ্ঞান নিয়ে জগদীশ চন্দ্র বসুর কৌতূহল দিন দিন বারতেই থাকে এবং তিনি আরো উচ্চ শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন আর নিজের এই মনবাসনাকে বাস্তবে রুপ দিতে তিনি ভর্তি হন লন্ডনের কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে।কঠোর অধ্যায়নের পর জগদীশ চন্দ্র বসু কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজ থেকে ন্যাচারাল সাইন্সে ডিগ্রী লাভ করেন।
জগদীশ চন্দ্র বসুর বিবাহ ও বাক্তিগত জীবন
১৮৮৫ সালেই জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর অবলাদেবীকে বিয়ে করেন।বিয়ের সময় তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল।জগদীশ চন্দ্র বসুর বাবা অনেক টাকা ঋণ ছিলেন।পরবর্তীতে অবলাদেবী ও জগদীশ চন্দ্র বসু মিলে তার বাবার ঋণ পরিশোধ করেন।
কর্মজীবনে জগদীশ চন্দ্র বসু
জগদীশ চন্দ্র বসুর কর্মজীবন শুরু হয় ১৮৮৫ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে। তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে ইংরেজদের শাসন চলমান ছিল। স্কুল,কলেজসহ সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছিল ইংরেজদের আধিপত্য। ভারতীয় শিক্ষকদের কোন সম্মান দেয়া হতনা এমনকি তাদের খুব কম বেতন দেয়া হত। কলেজে শিক্ষকতা শুরুর পর থেকেই জগদীশ চন্দ্র বসু ইংরেজদের এমন আধিপত্যের বিষয়টি খেয়াল করেন এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন।
নিজের অবস্থান ঠিক রেখে তিনি এই প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন এবং নিজের বেতন নেয়া বন্ধ করে দেন যার ফলে তিনি অর্থনৈতিক সঙ্কটে পরে যান। জগদীশ চন্দ্র বসুর এই প্রতিবাদ দীর্ঘদিন চলার পর ইংরেজ সরকার তাদের দাবি মেনে।
জগদীশ চন্দ্র বসুর গবেষণা
বিজ্ঞান যার ধ্যানে জ্ঞানে সে কি আর গবেষণা না করে থাকতে পারে! জগদীশ চন্দ্র বসু গবেষণা নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের অনেকটা সময়। গবেষণার সকল শাখাতেই তিনি ছিলেন সফল। ছোট বেলা থেকেই জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদ জগত নিয়ে অনেক ভাবতেন এমনকি প্রতিদিন বিকেল বেল নদির তীরে গিয়ে পরবেশটাকে অবলোকন করতেন।
ছোট বেলার সেই চিন্তা চেতনা তিনি তার গবেষণায় প্রয়োগ করেন এবং উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং তিনি প্রমান করতে সক্ষম হন যে উদ্ভিদ দেহেও প্রাণ আছে।উদ্ভিদ দেহে প্রাণ আছে এটা তিনি প্রমাণ করেন ক্রেসকোগ্রাফ নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে।উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য জগদীশ চন্দ্র বসু একটি গাছ এবং একটি বিষাক্ত গ্যাসযুক্ত পাত্র ব্যাবহার করেন। এরপর তিনি গাছটি বিষাক্ত গ্যাসযুক্ত পাত্রে অনেকক্ষণ রেখে দেন এবং খেয়াল করেন যে প্রাণী দেহের মতই গাছের পালস বোঝা যাচ্ছে।
এছাড়া তিনি এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার যেটার মাধ্যমে তার ছাড়াই বার্তা প্রেরণ করা সম্ভব হয়।এছাড়াও তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ অবদান রেখে গেছেন ।
জগদীশ চন্দ্র বসুর অর্জন ও সম্মাননা
জগদীশচন্দ্র বসু স্যার’ উপাধিতে ভূষিত হন ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে।
জগদীশচন্দ্র বসুকে Fellow of Royal Society হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ১৯২০ সালে*
জগদীশ চন্দ্র বসু সম্পর্কিত বিখ্যাত মনিষীদের উক্তি
ভারতের কোনও বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি হে আর্য আচার্য জগদীশ
জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।
জগদীশ চন্দ্র বসুর মৃত্যু
বিজ্ঞান জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র জগদীশচন্দ্র বসু ৭৮ বছর বয়সে ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর পরলোক গমন করেন।