মাদার টেরেসার জীবন বৃত্তান্ত

Rate this post

পৃথিবীতে হাজারো মানবতাবাদী মানুষের আগমন ঘটেছে যাদের ছোয়ায় নিপীড়িত ও নির্যাতিত অসহায় মানুষগুলো খুজে পেয়েছে বেঁচে থাকার নতুন আশা। এমন হাজারো মানবতাবাদীদের মধ্যে একজন হলেন মাদার টেরেসা যার নামটি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণ অক্ষরে খচিত রয়েছে।

পৃথিবীতে এমন মানুষ কমই আছে যারা নিজেরদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সারা বিশ্বের অসহায় ও গরীব দুখী মানুষর সুখ শান্তির জন্য নিজেরদের সপে দিয়েছেন নিবেদিত প্রাণ হিসেবে। মাদার টেরেসা ছিলেন তেমনি একজন নিবেদিত প্রান যিনি শুধু মাত্র মানবসেবার জন্য আলবানিয়া ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমান ১৯২৮ সালে।

মাদার টেরেসার জীবন বৃত্তান্ত
মাদার টেরেসার জীবন বৃত্তান্ত

মাদার টেরেসার সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা

নামমাদার টেরেসা
জাতিসত্তাআলবেনিয়ান
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্ব লাভ ভারত (১৯৪৭-১৯৯৭)
জন্ম২৬ আগস্ট ১৯১০ ইউস্কুপ, অটোম্যান সাম্রাজ্য
(অধুনা স্কোপিয়ে, উত্তর মেসিডোনিয়া)
পিতানিকল বোজাঝিউ
মাতাদ্রানাফিল বোজাঝিউ
দাম্পত্য জীবন সঙ্গীঅবিবাহিত
পেশাক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, ধর্মপ্রচারক
পরিচিতির কারণদ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ)
ধর্মখ্রিস্টান
মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ (৮৭ বছর)

আরো পড়ুনঃ

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবন বৃত্তান্ত

সত্যজিৎ রায়ের জীবন বৃত্তান্ত

জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবন বৃত্তান্ত

হুমায়ুন আজাদের জীবন বৃত্তান্ত

মাদার টেরেসার প্রাথমিক জীবন

মানবতাবাদী মহীয়সী এই নারীর জন্ম ১৯১০ সালের ২৬শে অগাস্ট আলবেনিয়ায়(বর্তমান মেসিডোনিয়া) এটা সত্যি যে ছোটবেলা থেকেই যে মানুষগুলো অনেক দুঃখ -কষ্টের মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠে তারা বড় হয়ে মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করে। মাদার টেরেসার বাল্য জীবন ছিল অনেক কষ্টের।

কারণ তার বয়স যখন মাত্র ৮ বছর তখন তার বাবা পরলোক গমন করেন ফলে মাদার টেরেসার পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পরে যান। নিজের এমন কষ্ট মেনে নিয়ে মাদার টেরেসার পণ করেন মানবসেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন তিনি।

See also  সত্যজিৎ রায়ের জীবন বৃত্তান্ত

মাদার টেরেসার পিতার নাম নিকোলা বোজাঝিউ এবং মাতার নাম দ্রোনাফাইল বোজাঝিউ। মাদার টেরেসার পিতা এক সময় আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে তিনি নিজেকে ব্যবসার সাথে যুক্ত করেছিলেন।

মাদার টেরেসার কর্মজীবন

বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ মাদার টেরেসাকে সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করে এবং মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিজের পরিবারের মায়া ত্যাগ করে মানবসেবা ও ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ করেন মাদার টেরেসা। গৃহ ত্যাগ করে প্রথমে মাদার টেরেসা আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমান ইংরেজি শিক্ষার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে ভারতে এসেই ধর্ম চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেন মাদার টেরেসা এবং ১৯৩১ সালে প্রাথমিকভাবে সন্ন্যাসিনীর শপথ গ্রহণ করেন এবং ১৯৩৭ সালে সন্ন্যাসিনী হসেবে চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন মাদার টেরেসা।

মানবসেবায় যিনি ব্রত হয়েছেন তিনি কি আর দরিদ্র মানুষদের কষ্ট দেখে বসে থাকতে পারেন! ১৯৩৭ সালে কলকাতার লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষকতা হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেন মাদার টেরেসা।

শিক্ষকতার পাশাপাশি মানবসেবা চালিয়ে যান সমানভাবে।তার ছোঁয়ায় দরিদ্র মানুষগুলো যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।১৯৪৮ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন মাদার টেরেসা।

মাদার টেরেসা ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করার ঠিক বছর দুই আগে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান মধ্যে চলমান দাঙ্গা এবং দাঙ্গার করুণ পরিণতি মাদার টেরেসাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। ১৯৪৮ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভের পর মাদার টেরেসা সিদ্ধান্ত নেন নিলপারযুক্ত সাদা শাড়ি পরেই জীবনের বাকি সময় মানবসেবা করেই কাটিয়ে দিবেন।আপনি মানবসেবা করবেন অথচ কোন সেবামূলক কোন সংস্থা থাকবেনা তা কি হয়!

তাই ১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর মাদার টেরেসা মাত্র ১৩ জন সিস্টার নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন “মিশনারীস অব চ্যারিটি”।মিশনারীস অব চ্যারিটির উদ্দেশ্যে ছিল দেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের নিপীড়িত,ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করা।মাদার টেরেসা ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষদের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার জন্য সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী মানুষদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন অর্থ সংগ্রহ করার জন্য।

See also  কাজী নজরুল ইসলামের জীবন বৃত্তান্ত

এই অর্থ সংগ্রহের জন্য অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে মাদার টেরেসাকে।যদিও তিনি নিজের এই কষ্টগুলোকে নিমিষেই ভুলে গেছেন ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষদের মুখে অন্ন তুলে দিতে পেরে।মাদার টেরেসা শুধু এখানেই থেমে থাকেন নি গরীব ও অসহায় মানুষ যেন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তিনি ১৯৫২ সালে কলকাতায় আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন।

মাদার টেরেসার অর্জন ও সম্মাননা

মহীয়সী এই নারী তার সেবামূলক জীবনে অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।চলুন দেখে নেই তার জীবনের অর্জন ও সম্মাননাঃ


মাদার টেরেসা পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন ১৯৬২ সালে

জওহরলাল নেহেরু পুরস্কার-১৯৬৯ সালে

মাদার টেরেসার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে নোবেল শান্তি পুরস্কার যেটা তিনি ১৯৭৯ সালে লাভ করেন।

মাদার টেরেসা ভারতরত্ন পান ১৯৮০ সালে

মাদার টেরেসা কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল লাভ করেন ১৯৯৭

সন্তকরণ পুরস্কার-২০১৬।

মাদার তেরেসার ১০টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

“বাইরের জগতে এখনি বেড়িয়ে পড়ো এবং ভালোবাসো প্রত্যেকটি মানুষকে। তোমার উপস্থিতি যেন হাজারো মানব হৃদয়ে নতুন আলোর সঞ্চার জাগায়।“

“যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম না হও, তাহলে অন্তত একজনকে সাহায্য করো।“

“কারোর নেতৃত্বের অপেক্ষা না করে নিজ থেকেই সকল উদ্যোগ নেয়া উচিত।“

“আমি একা এই পৃথিবীকে বদলে দিতে পারবোনা। তবে আমি স্বচ্ছ জলে একটি ছোট পাথরের টুকরো নিক্ষেপ করে বড় বড় জলতরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারবো।“

“সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সফল হওয়ার আদেশ দেননি, শুধুমাত্র সর্বদা অবিরাম চেষ্টা ধরে রাখার আহ্‌বান করেছেন।“

“মানুষকে বিচার করে সময় নষ্ট করলে কখনোই তাদেরকে ভালবাসার সময় পাওয়া যাবে না।”

“প্রত্যেকের প্রতি ভালবাসার শুরুটা হোক হাসির মাধ্যমে। “

“আমরা সকলেই শুরুতেই বিশাল কোনো মহৎ কাজ করতে পারবো না। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে ছোট ছোট অনেক ভাল কাজ করা সম্ভব।“

“অস্ত্র দিয়ে কখনোই শান্তিকে ঘরে আনা সম্ভব নয়, সম্ভব ভালবাসা ও সহানুভূতির হাত ধরে।“

“সবচেয়ে ভয়াবহ দারিদ্রতা হচ্ছে একাকীত্ব এবং প্রিয়জনের সহানুভূতি না পাওয়ার অনুভূতি।“

মাদার টেরেসার প্রস্থান

লক্ষ গরীবের বেচে থাকার অবলম্বন মাদার টেরেসা ধরণীর বুকে ছেড়ে চলে যাওয়ার অাগে বেশ কয়েকবার হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল। হার্ট এ্যাটাক হওয়ার কারণে তার দেহে কৃএিম পেসকেমার বসানো হয়েছিল।পেসকেমার বসানোর কিছুদিন পর মাদার টেরেসার হৃতপিন্ড রক্ত পরিবহন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

অবশেষ পরোপকারী মহিয়সী এই নারী ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর পরলোক গমন করেন।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.