‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়’ বাংলা সাহিত্যের একজন পরিচিত মুখ। যিনি একাধারে ঔপন্যাসিক,অনুবাদক,কবি এবং লেখক। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয়-বাঙালি। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার অসাধারণ লেখনির জন্য পাঠক সমাজে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। হাংরি আন্দোলনে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় অনবদ্য ভুমিকা পালন করেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা
নাম | শক্তি চট্টোপাধ্যায় |
ছোটবেলার ডাকনাম | শক্তি |
ছদ্মনাম | স্ফুলিঙ্গ সমাদ্দার রূপচাঁদ পক্ষী |
জন্ম | ২৫শে নভেম্বর ১৯৩৩, জয়নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, ব্রিটিশ ভারত |
পিতা | বামানাথ চট্টোপাধ্যায় |
মাতা | কমলা দেবী |
দাম্পত্য জীবন সঙ্গী | মীনাক্ষী দেবী |
সন্তান | তিতি চট্টোপাধ্যায় |
পেশা | কবি, উপন্যাসিক, লেখক ও অনুবাদক |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | আনন্দ পুরস্কার (১৯৭৫) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৩) |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মৃত্যু | ২৩শে মার্চ ১৯৯৫, কলকাতা (বয়স ৬১) |
আরো পড়ুনঃ
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন বৃত্তান্ত
কাজী নজরুল ইসলামের জীবন বৃত্তান্ত
স্বামী বিবেকানন্দের জীবন বৃত্তান্ত
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জীবন বৃত্তান্ত
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রাথমিক জীবন
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৩ সালে ভারতের চব্বিশ পরগণা জেলার জয়নগরে। তিনি ২৫শে নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রখ্যাত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বাবার নাম শ্রী বামানাথ চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম শ্রীমতী। শক্তি চট্টোপাধ্যায় মাত্র চার বছর বয়সে তার পিতাকে হারান তবে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পিতামহ তাকে পরম স্নেহে লালন পালন করে তাকে বড় করে তোলেন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বাবা শ্রী বামানাথ চট্টোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষা জীবন
শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই ১৯৪৮ সালে তার পরিবারের সাথে কোলকাতায় চলে আসেন এবং এ বছরই মহারাজা কাশিম বাজার পলিটেকনিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। হাতের কাজের প্রতি অধিক আগ্রহ ছিল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আর এই আগ্রহই তাকে পলিটেকনিকে ভর্তি হতে উদ্ভদ্ধ করে।পলিটেকনিকে পড়া অবস্থায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার শ্রেণি শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। পলিটেকনিকে পড়া অবস্থাতেই শক্তি চট্টোপাধ্যায় লেখালেখিতে মনোযোগী হন।
এত কিছুর মধ্যেও শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং কৃতজ্ঞতার সাথে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।এরপর শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোলকাতার সিটি কলেজে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগে(কমার্স) ভর্তি হন এবং সিটি কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে কৃতজ্ঞতার সাথে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশ করেন।এরপর শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা পালন করায় প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।ফলে তার শিক্ষা জীবন এখানেই থেমে যায়।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কর্ম জীবন
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কর্ম জীবন ছিল নানা মুখি কারণ তিনি কোন পেশাতেই নিজেকে স্থায়ী করতে পারেননি। কখনো ব্যাবসা আবার কখনো চাকুরী করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি কিছুদিন সাক্সবি ফার্মা লিমিটেডে স্টোরে সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এরপর তিনি অল্প কিছুদিন ভবানীপুর টিউটোরিয়াল হোমে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন তবে এখানেও ব্যর্থ শক্তি চট্টোপাধ্যায়!! সবখানে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। নতুন কর্মের সন্ধানে আবারো বেরিয়ে পরেন তিনি।
শেষমেশ একটি মোটর কোম্পানিতে তার চাকুরী হয় কিন্তু এখানেও তিনি বেশিদিন মনোযোগী হতে পারেননি।তার কর্ম জিবনের সবচেয়ে বেশী সময় অতিবাহিত হয়েছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করার সময়। কারণ তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৯৪ অর্থাৎ মোট ২৪ বছর তিনি কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করেছেন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহিত জীবন
১৯৬৫ সালে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাথে মীনাক্ষী দেবী নামের এক ভদ্র নারীর পরিচয় ঘটে।তাদের এই পরিচয় পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয় এবং দীর্ঘদিন প্রেম করার পর তারা ১৯৬৫ সালেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য জীবন
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক জীবন ছিল অত্যন্ত চমকপদ ও সফলতায় পরিপূর্ণ। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের মধ্যে কবিতাই বেশি ঠাই পেয়েছিল। কবিতা লিখতে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ১৯৬৫ সালে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তার প্রকাশিত প্রথম কবিতা হল “যম”যেটা বুদ্ধদেব বসু প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস কুয়োতলা।
কিন্তু কবিতা লিখতেই যেন বেশি আনন্দ খুজে পেতেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।তাইতো তিনি তার বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর বাসায় আড়াই বছর শুধু কবিতা লেখায় মনোনিবেশ করেন এবং একজন সফল লিরিকাল কবিতে পরিণত হন।কবিতা লেখায় তার অসাধারণ দক্ষতা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় এবং তিনি পঞ্চাশের দশকের কবিদের মুখপত্র কৃত্তিবাস পত্রিকার অন্যতম কবি হিসেবে বিবেচিত হন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ
১) ধর্মেও আছো জিরাফেও আছো
২) হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান
৩) পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি
৪) পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি
৫) ভাত নেই পাথর রয়েছে
৬) প্রচ্ছন্ন স্বদেশ
৭) যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো
৮) ছবি আঁকে ছিঁড়ে ফ্যালে
৯) কিছু মায়া রয়ে গেল
১০) জ্বলন্ত রুমাল
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু
শক্তি চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যজগতে অসামান্য অবদান রেখে ১৯৯৫ সালের ২৩শে মার্চ ৬১ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।