সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের নামটা সামনে আসলে প্রথমেই মনে পরে যায় ভৌতিক ও গোয়েন্দা গল্পের কথা। কারণ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেন ভৌতিক ও গোয়েন্দ গল্প লেখায় সিদ্ধহস্ত। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বাংলার খ্যাতনাম কথা শিল্পীদের একজন যার শিল্পকর্ম সকল ধরণের পাথকদের কাছে আজও সমানভাবে সমাদৃত। খ্যাতনামা এই কথাশিল্পীর জন্ম ১৯৩০ সালে ১৪ই অক্টোবর মুর্শিদাবাদ খোশবাসপুর গ্রামে।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের বাবার নাম সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী এবং মাতার নাম আনোয়ারা বেগম। বাল্যকাল থেকেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভবঘুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।
এমনকি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি গান,বাজনা,নাটক ও অভিনয় নিয়ে মত্ত থাকতেন।নাচ ও গানের উপরে ভিত্তি করে তিনি রাঢ় বাংলার লোকনাট্য ‘আলকাপ’ গঠন করেন এবং সেখানে নাচ-গানের প্রশিক্ষক হিসেবে ভুমিকা পালন করেন। বাঁশের বাঁশি বাজাতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সংক্ষিপ্ত বায়োডাটা
নাম | সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ |
জন্ম | ১৪ই অক্টোবর ১৯৩০ সাল,মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রাম |
পিতা | সৈয়দ আবদুর রহমান ফেরদৌসী |
মাতা | আনোয়ারা বেগম |
দাম্পত্য জীবন সঙ্গী | হাসনে আরা সিরাজ |
পেশা | নাচ-গানের প্রশিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, ঔপন্যাসিক |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলী সমগ্র | কর্নেল সমগ্র, তরঙ্গিনীর চোখ, বন্যা, নিশিমৃগয়া, কামনার সুখদুঃখ, নিশিলতা প্রভৃতি |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার, নরসিংহদাস পুরস্কার প্রভৃতি |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মৃত্যু | ৪ই সেপ্টেম্বর ২০১২, কলকাতা |
আরো পড়ুনঃ
জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবন বৃত্তান্ত
হুমায়ুন আজাদের জীবন বৃত্তান্ত
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শিক্ষা জীবন
ভবঘুরের প্রতি অসম্ভব টান থাকলেও লেখাপড়াতে দুরন্ত ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় থেকে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শিক্ষা জীবনের শুরু হয়। মুক্তকেশী বিদ্যালয়টির অবস্থান ছিল নবগ্রাম জেলায়।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এতই মেধাবী ছিলেন যে এই বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই তিনি উপন্যাস লেখায় মননিবেশ করেন এবং তিনি একটা উপন্যাস লিখে ফেলেন যেটার নাম ‘প্রেমের প্রথম পাঠ’। তার এই উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ছিল নবগ্রাম গোপালপুর।গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। নিজের তীক্ষ্ণ মেধার প্রমান রেখে ১৯৫০ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে কৃতজ্ঞতার সাথে বিএ পাশ করেন।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের সাহিত্যিক জীবন
প্রতিটি সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সাথে যেন প্রকৃতির অবাধ প্রেম। ব্যতিক্রম নন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজও । ছোট বেলা থেকেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ গাছ-পালা, নদী-নালা,খাল,বিলের সাথে খেলা করেই বেড়ে উঠেছেন। তাইতো সাহিত্য ছাড়া জীবনে বিকল্প কিছু ভাবতে পারেননি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের প্রতিটি লেখনীতে রাঢ়ের মাটি, গাছ ও মানুষের জীবনধারার সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়।
একসময়ের ভবঘুরে মানুষটা যেন এবার কর্মের তাড়না অনুভব করতে লাগলেন। অবশেষে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ পাড়ী জমালেন কলকাতায়। এখানে এসে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেন ভিন্ন ধাঁচের একজন কথাসাহিত্যিক।
জ্ঞান ও গরিমায় তৎকালীন কোন লেখকই তার সমসাময়িক ছিলেন না। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ যে শুধু সমাজের অবস্থা ও মানুষের চরিত্র নিয়ে লিখেছেন তা কিন্তু নয় তার ভাবনার মধ্যে ছিল শিশু ও কিশোররাও। “গোয়েন্দা কর্নেল” হল শিশুদের জন্য তার রচিত বিখ্যাত একটি গোয়েন্দা চরিত্র। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের বিখ্যাত কিছু ছোটগল্প- “হিজলবিলের রাখালেরা”,”গোঘ্ন”, “মানুষের জন্ম”,”উড়োপাখির ছায়া”,”মৃত্যুর ঘোড়া”, পিসি ও ঘাটবাবু” ইত্যাদি।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেন একজন বাস্তববাদী মানুষ। মানুষ তার লেখনিতে যেন নিজেদের বাস্তব জিবনের গল্পগুলোই খুজে পেত। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার সাহিত্য জীবনে অসংখ্য উপন্যাস ও ছোট গল্প লিখেছেন। তার প্রথম লিখিত উপন্যাস – “নীলঘরের নটী”।তবে ছোটগল্প নিয়ে তার লেখনি ছিল সবচেয়ে বেশী ।তিনি মোট ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন। এছাড়া ভৌতিক গল্প লিখতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মৃত্যুঃ
সাহিত্য জগতে অসামান্য অবদান রাখা এ মানুষটি ২০১২ সালের ৪ই সেপ্টেম্বর ৮১ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।